

মোঃ ওয়াজেদ আলী, সদরপুর(ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলাটি পদ্মা ও আঁড়িয়াল খাঁর বুক চিড়ে অবস্হিত। বিশ্বজাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফ, বাইশরশি জমিদার বাড়ী, চন্দ্র পাড়া পাক দরবার শরীফ সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্হান ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কারনে এটি সম্ভাবনাময় উপজেলা হলেও নানা প্রতিকুলতার কারনে পিছিয়ে রয়েছে এই জনপদের মানুষ। চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্হার তেমন কোন উন্নতি না হওয়া ও সরকারীভাবে নতুন কোন ভবন, অফিস বা প্রতিস্ঠান প্রতিষ্ঠিত না হওয়া এর অন্যতম কারন বলেই অনেকের ধারনা। এখানকার কয়েক লক্ষ্য মানুষের ব্যবস্হাপনা তথা চিকিৎসা, শিক্ষা, অফিসিয়াল কাজকর্ম ও নিত্যপ্রয়োজনীয় হাটবাজার বলতে সদরপুরের উপর নির্ভরশীল।
কিন্ত উপজেলা বাজারের পরিধি খুবই সংকীর্ণ। নেই বড় কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বড় কোন মার্কেট। যা আছে তার অধিকাংশ মার্কেটের নেই পার্কিং ব্যবস্হা। মার্কেট করতে আসা জনগনের যানবাহন গুলি সদরপুরের প্রধান সড়কের দুইপাশে গাদাগাদি করে রাখার ফলে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী, পথচারী, ফায়ারসার্ভিস এবং রুগীবহন কারী গাড়ি বা যানবাহন প্রায়ই জ্যামের কারনে বিড়ম্বনার স্বীকার হয়।
সদরপুর বাজারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি অপরিকল্পিত বাজার ব্যবস্হাপনার মাধ্যমে। ময়লা বা বর্জ ব্যবস্হাপনা,পানি সরানোর জন্য উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্হাপনা সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এই বাজারটি। বাজারের অধিকাংশ জায়গাজুড়ে রয়েছে অপরিকল্পিত ছোট ছোট দোকান ঘর। গলির ভেতরের দোকান গুলির সামনের চালা বর্ধিত করে গলিগুলিকে সরু ও দখল করে রাখার কারনে বাজারটি বেশ ঝুকির মধ্যে রয়েছে। এর ফলে যে কোন সময় আগুন জনিত কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এখানে ফারায়সার্ভিসের গাড়ী প্রবেশ করতে পারতো না। তাছাড়া বাজারের ভেতরের কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন সরকারী ও খাস জমি দীর্ঘদিন যাবৎ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি দ্বারা দখল করে সেখানে অবৈধ স্হাপনা নির্মাণ করে ভোগদখল করতে দেখা যায়। ফলে বাজারটি আরও সংকুচিত, সরু ও অ-ব্যবস্হাপনাময় বাজারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এ সকল দখলদার ও অ-ব্যবস্হাপনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে হাজারো মানুষের অভিযোগ ও অনুরোধ আসে।
সদরপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরনের লক্ষ্যে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া সুলতানা দৃষ্টান্ত মূলক ও মাইলফলক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সদরপুরের সর্বোস্তরের মানুষ,ব্যবসায়ী,পথচারী ও সাধারণ জনগনের কথা চিন্তা করে তিনি সদরপুরকে একটি আধুনিক ও উন্নত সদরপুর এবং একটি পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্হাপনা উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে অভিযান শুরু করেন।
অভিযানের পূর্বে তিনি বার বার বাজার কমিটি,ব্যবসায়ী,পথচারী,সাধারণ জনগন ও বিভিন্ন গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে মতামত প্রকাশ করেন এবং নিয়ম অনুযায়ী পর্যায় ক্রমে বিভিন্ন স্হাপনা ও স্হানে উচ্ছেদের আগে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকারী জায়গা খালি করার নোটিশ প্রদান করেন।
এ কাজে সদরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুবানা তানজিন সার্বিক সহযোগীতা, সরকারী সার্ভেয়ার দ্বারা বেদখলকৃত সরকারী সম্পত্তি চিহ্নিত করণ ও অভিযানে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সাধারণ জনগন বেশ উৎফুল্লতার সাথে এ কাজে সহযোগীতা করেন।
এই অভিযানে প্রায় ২০০ অবৈধ ছোট বড় ঘর ও স্হাপনা উচ্ছেদ সহ প্রায় ৬২ শতাংশ সরকারী সম্পত্তি উদ্ধার করা হয় যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
সদরপুরে এখন টপ অফ দ্যা নিউজ এবং সকল মানুষের জল্পনা-কল্পনার কেন্দ্র বিন্দু উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া সুলতানা।
ইতিহাস রচিত সদরপুরের এমন অভিযানের ফলে দেশ বিদেশ সহ প্রায় কয়েক হাজার মানুষের ফেসবুক প্রোফাইলে তাকে নিয়ে পোষ্ট দিতে দেখা গেছে।
তার উচ্ছেদ অভিযানের ভিডিও চিত্র সদরপুরের এ যাবৎকালের স্মরণীয় ভিউ হয়েছে।
মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ,হাজার হাজার শেয়ার ও লক্ষ লক্ষ লাইক ও কমেন্ট করেছে।
সাক্ষাৎকারে একাধিক সচেতন ব্যক্তি বলেছেন সদরপুরে এতো সরকারী সম্পত্তি থাকা সত্বেও সাবরেজিস্ট্রার অফিস, ফায়ার সার্ভিসের অফিস ও মডেল মসজিদ সদরপুর প্রোপারে না হয়ে অন্য মৌজায় এমনকি অন্য ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে সম্ভাবনা থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি এবং আমাদের ঐতিহ্য বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
একাধিক ব্যক্তি উদ্ধারকৃত সম্পত্তি আর কোনদিন যেনো কেউ দখন করতে না পারে তার ব্যবস্হাসহ নতুন কোন অফিস বা ভবন স্হাপনের মাধ্যমে হারানো ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া সুলতানার উদ্যোগে ইতিমধ্যে চর মানাইর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের জন্য দখলকৃত একটি রাস্তার উচ্ছেদ অভিযান এবং দেয়ারা নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্হাপনার কাজ সমাপ্ত করে ব্যপক প্রশংসায় ভাসছেন।। বিদ্যালয়টি ২০২৩ সালে তৎকালীন দক্ষ ও জনবান্ধন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেল এর উদ্যোগে ভিত্তি প্রস্তর স্হাপন করেন জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আমার উপর অর্পিত সকল দ্বায়িত্ব বোধ ও জনগনের দোরগোড়ায় সেবার মান পৌঁছে দিতে এমন উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। তিনি বলেন, সদরপুর একটি সম্ভাবনাময় জনপদ। তার এ কাজে সদরপুরের মানুষের উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিলো বলেই তিনি এতো বড় একটা কাজে সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন। এ কাজে সহযেগীতার জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা, সাধারণ জনগন ও মিডিয়াকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তার এমন অভিযান ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।