
রিয়াজ রহমান, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জে) প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের চিলাউড়া গ্রামের রিংকন হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছেন পিবিআই সিলেট। হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে পাবেল ওরফে তাবেল (২১) ও জহিরুল ইসলাম (২৩) কে সিলেটের কদমতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন পিবিআই সিলেট জেলা। পিবিআই এর জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা জানায়, রিংকন ও তারা উপজেলার চিলাউড়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক মেম্বার লুলু মিয়ার মাছের খামারে কাজ করত। ঘটনার দিন দুপুর অনুমান ১২.৩৫ টার সময় খামারের গোয়াল ঘরের পাশের আম গাছ থেকে আম পাড়ার জন্য বললে রিংকন বিশ্বাস গাছে উঠতে রাজি হয় না। একাধিকবার বললেও রিংকন রাজি না হওয়ায় আসামীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রিংকনকে এলোপাথারীভাবে মারপিট করে এবং খামারের গোয়ালের পাশে গোবরের ঢিবিতে মুখ ও মাথা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে রিংকনকে হত্যা করে। পরবর্তীতে তারা উক্ত হত্যাকে গাছ থেকে পড়ে গোবরের পানিতে ডুবে দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যু মর্মে প্রচার করে।
জানাযায়, ২০২৪ সালের ২২ জুন লুলু মেম্বারের মাছের খামারে রহস্যজনক ভাবে খুন হয় কিশোর রিংকন বিশ্বাস। প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ সমর্থিত সাবেক মেম্বার লুলু মিয়া ও তার লোকজনের চাপে নিহত রিংকন এর পিতা শ্রীকান্ত বিশ্বাস সেদিনই ছেলেকে মুখাগ্নি শেষে সমাধিস্থ করেন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ঘটনার ০২ দিন পর গত বছর ২৪ জুন নিহতের পিতা শ্রীকান্ত বিশ্বাসের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জগন্নাথপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়। থানা পুলিশ গত ২৭ জুন ২০২৪ খ্রিঃ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর হতে নিহতের লাশ উত্তোলন সহ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এই ঘটনায় গত বছরের ১৬ জুলাই নিহতের মা বাসন্তি রানী বাদী হয়ে লুলু মেম্বারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে সিআর মামলা নং-১৪২/২৪, তারিখঃ ১৬/০৭/২৪, দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত অফিসার ইনচার্জ জগন্নাথপুর থানাকে উক্ত মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির পর গত ১৫ অক্টোবর ২০২৪ খ্রি. তারিখ থানা পুলিশ অপমৃত্যু মামলা তদন্ত শেষে ভিকটিম রিংকন বিশ্বাস গাছে উঠে আম পাড়তে গিয়ে পা ফসকে গাছের নিচে পুকুরে থাকা গোবরের মধ্যে মাথা নিচের দিকে পড়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছে মর্মে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করে এবং সিআর মামলা নং-১৪২/২৪, তারিখঃ ১৬/০৭/২৪, মামলাটি তদন্ত শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। নিহতের মা বাসন্তি রানী থানা পুলিশের দাখিলকৃত চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে নারাজির আবেদন দিলে আদালত গত বছরের ০৫ নভেম্বর জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে মামলা রুজু করার নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশ প্রাপ্ত হইয়া জগন্নাথপুর থানার মামলা নং-০৯ তারিখ-১২/১১/২০২৪ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ রুজু করেন এবং এক মাসের মধেই মামলাটির তদন্ত শেষ করে বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। পুনরায় বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে গত ২৩/০৩/২০২৫ খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার পিবিআই সিলেট জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে পিবিআই সিলেট জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। এসআই মোঃ তারিকুল ইসলাম মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন এবং তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৭ জুলাই ২০২৫ খ্রি. তারিখ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পাবেল প্রকাশ তাবেল (২১) এবং এজাহারনামীয় আসামী জহিরুল ইসলাম (২৩) কে সিলেট কদমতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন। পুলিশ রিমান্ডে আনেন।
আসামীরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।