
স্টাফ রিপোর্টার মোহাম্মদ শাহদাত হোসেন
আশিস কুমার বাকচী একাধারে শিক্ষাবিদ, শিক্ষানুরাগী,গবেষক, দার্শনিক,আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র বিশ্লেষক এবং সমাজ সংস্কারক। তিনি ১৯৮৪ সালের ১৫ আগস্ট সূর্যোদয় কালে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী উত্তর ভেন্নাবাড়ি গ্রামের এক উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে মতুয়া আশিস কুমার বাকচীর জন্ম। তিনি বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক -ইতিহাস বিভাগ হিসেবে সরকারি নজরুল কলেজ; সাতপাড়, গোপালগঞ্জ এ কর্মরত আছেন । তার পিতা প্রেমচাঁদ বাকচী এবং মাতা বিন্দু রানী বাকচী। পিতা ছিলেন নিজ গ্রামের হাইস্কুলের একজন শিক্ষানুরাগী প্রধান শিক্ষক।
গ্রামের ১২৯ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; উত্তর ভেন্নাবাড়ি, গোপালগঞ্জ এ লেখকের শিক্ষা জীবন শুরু হয় । তিনি ১৯৯৯ সালে ভেন্নাবাড়ি সম্মালিত উচ্চ বিদ্যালয় বিদ্যালয় থেকে এস. এস. সি. প্রথম শ্রেণীতে পাশ করেন। ২০০১সালে শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়; কালকিনি, মাদারীপুর কলেজ থেকে এইচ. এস. সি. প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি দশম স্থানে ব্যাচেলর অফ অনার্স, ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ দ্বিতীয় শ্রেণি দ্বিতীয় স্থান পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং শিক্ষা উপবৃত্তি পান। অনার্স- মাস্টার্সের রেজাল্টে লিখিত পরীক্ষায় তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু ভাইবা পরীক্ষার নম্বর তার জন্য ছিল এক বাঁধা। তা না হলে তাকে হয়তো আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষক হিসেবে দেখতে পাওয়া যেত! এরপর শুরু হয় তার অপ্রতিরোধ্য বিসিএস গোল্ডেন জার্নি। পরপর ছয়টি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। দুইবার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার এবং চারবার নন ক্যাডার। এবারও তার ভাইবা বাঁধা । তা না হলে হয়তো তাকে বিসিএস পুলিশ বা বিসিএস প্রশাসনে দেখতে পাওয়া যেত! যা হোক ২০১১ সালে ২৯তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এর মাধ্যমে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন চৌকশ শিক্ষক-কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হন। পদায়ন দেয়া হয় সরকারি নজরুল; সাতপাড়, গোপালগঞ্জে। উল্লিখিত তিনি ২০০১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞানের ক্লাস নেন এবং ২০০৮ সাল এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিসিএস মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে তার জ্ঞান বিতরণ করছেন। সরকারি নজরুল কলেজে যোগদান করলে তার জ্ঞানের আলো দ্রুত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে থাকে। তিনি তার উৎসাহ -উদ্দীপনা এবং কৌশলী পড়ালেখার মাধ্যমে কলেজের শিক্ষার্থীদের ভালো রেজাল্ট এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। তার শিক্ষাদানের উদ্যেশ্যই হলো মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করে ভালো ক্যারিয়ার ও ভালো মানুষ হওয়া।
সরকারি নজরুল কলেজের শিক্ষক পরিষদে রয়েছে তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। একধারে তিনি তিনবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তিনবার সম্পাদক মনোনীত ও নির্বাচিত হন। তিনি বিসিএস শিক্ষা সমিতি, সরকারি নজরুল কলেজ ইউনিটের সম্পাদক এবং বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি,গোপালগঞ্জ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রখর জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তার বহুমাত্রিক জ্ঞান বিতরণ করতে থাকেন নিয়মিত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ২০০১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রী হরিচাঁদ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ, জগন্নাথ হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে আসীন ছিলেন। তিনি ও তার বন্ধু শশাঙ্ক বর, হিরন্ময় বারুরী, সুরেশ বিশ্বাস, উত্তম বিশ্বাস, বিপুল মৌলিকসহ অনেক বন্ধু তথা ঐ পরিষদের তৎকালীন মতুয়া নেতৃবৃন্দ ছিলেন রাজধানী ঢাকার বুকে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ মন্দির প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি ছিলেন ২০১০ সালে শ্রী শ্রী পূর্ণব্রহ্ম পরিষদ মন্দির; শাহবাগ, ঢাকা প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য। এছাড়া তিনি ছিলেন শ্রী হরিচাঁদ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ, বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, মাদারীপুর জেলাধীন রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী ইউনিয়নে মহামানব গণেশ পাগল সেবাশ্রমে সম্প্রতি নির্মাণাধীন শ্রীশ্রী হরিচাঁদ মন্দির প্রতিষ্ঠায় আশিস কুমার বাকচী ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা। মতুয়া দর্শন সম্পর্কিত পত্রিকা “জাগরণ পত্রিকার” গবেষণা সেলের অন্যতম গবেষক এবং মতুয়া সাহিত্য সমাজ পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর অন্যতম সদস্য।রাজধানী ঢাকায় বুকে সুপ্রিম কোর্টে প্রাঙ্গণে যুগান্তকারী আন্তর্জাতিক মতুয়া সাহিত্য সম্মেলন-২০২৩ এর অন্যতম সংগঠক,সঞ্চালক ও পরিচালক।
তিনি বর্তমানে মতুয়া সাহিত্য সমাজ বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব -০১।
তিনি নিজ কর্মস্থল ব্যতীত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর ভেন্নাবাড়ী দরিদ্র জনপদের বাতিঘর হিসেবে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী কর্ণ-কুসুম মহাবিদ্যালয় নামক একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সাথে ওতোপ্রতভাবে জড়িত। তিনি উক্ত মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন আজীবন দাতা সদস্য। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, শিক্ষানুরাগী , মেধাবী শিক্ষক এবং অন্যদিকে একজন সমাজ সংস্কারক ও মতুয়া ক্লাসিক্যাল দার্শনিক। তার পাশ্চাত্য দর্শন তথা মাইলেসীয় দর্শন, পিথাগোরীয় দর্শন,হিরাক্লিটাস, এলিয়াটিক দর্শন, বহুত্ববাদ, পরমাণুবাদ, সক্রেটিস, সিনিক ও সিরা নাইট সম্প্রদায়,প্লেটো, এরিস্টটল, এপিকিউরীয় দর্শন, স্টোয়িক দর্শন, রোমান দর্শন, সংশয়বাদ, প্লুটার্ক,ফিলোজুডিয়াস, প্লোটিনাস, প্লোকাস, খ্রিস্টীয় দর্শন, আরবি-ফার্সি,চৈনিক, এবং ভারতীয় দর্শন,অগাস্টিন উত্তর খ্রিস্টীয় দর্শন মধ্যযুগীয় দর্শনের উৎপত্তি, টমাস একুনাস,ডানস স্কোটাস, রোজার বেকন, মেইস্টার একহার্ট, ওকাম স্কলাস্টিকবাদের ওপর ব্যাপক পান্ডিত্য। ইতোমধ্যে সাম্যবাদী মানবিক মতুয়া দর্শন প্রচারে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দর্শন সম্পর্কে তার পান্ডিত্যেপূর্ণ আলোচনা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদিজী’র ওড়াকান্দির বিখ্যাত ভাষণ সুন্দরভাবে ডিসকোর্স এ্যানালাইসিস করেছেন। তিনি মতুয়া বাল্য শিক্ষার জন্য মতুয়া দর্শনের আলোকে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ ছন্দ আকারে রচনা করেছেন। এছাড়া মতুয়া শিক্ষা,সাহিত্য ও দর্শনের ওপর রয়েছে তার অসংখ্য লেখনী। মানবকল্যানে মতুয়া দর্শনের আলোকে সাম্যবাদী সমাজ সংস্কারে তিনি দৃঢ় বিশ্বাসী। তিনি সমাজের সংস্কারবাদী অগণিত সচেতন মানুষের পক্ষে হিন্দু ও অন্যান্য সকল জনসমষ্টিকে বর্ণবৈষম্য, জাতপাত এবং কুসংস্কারের আঁধার থেকে আলোতে প্রবেশের জন্য ‘মতুয়া’ হবার আহ্বান জানিয়েছেন।
সব্যসাচী আশিস কুমার বাকচী বিভিন্ন ধরনের মানবিক,সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। তিনি একজন ‘মতুয়া কবি-সাহিত্যিক- প্রাবন্ধিক ও গবেষক’। তিনি ইতিমধ্যে মতুয়া কৃতিরত্ন উপাধি লাভ করেছেন।
উল্লিখিত, মতুয়া সাহিত্য ছাড়াও বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃত একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস ১ম পত্র ও ২য় পত্র গ্রন্থ দুটি রচনা করেছেন। এছাড়া তার অনন্য গবেষণা গ্রন্থ বাংলার ইতিহাসের সত্যানুসন্ধান (এখনো অপ্রকাশিত) এবং তথ্য বাতায়ন জ্ঞানপিপাসু শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষুধা নিবারণ করবে।
তিনি মতুয়া ধর্মদর্শন বিষয়ক গবেষণা কল্পে নিয়মিত কাজ করে চলেছেন, যা স্ফুলিঙ্গের গতিধারার মতোই প্রবাহমান।
উল্লিখিত তার গবেষণার জন্য রয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার নিজস্ব লাইব্রেরি। যার নাম লাইসিয়াম। সকল প্রকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে রয়েছে তার সরব উপস্থিতি।
সর্বোপরি তিনি একজন সৎ-দয়ালু-পরোকারী-নিরহংকারী- দেশপ্রেমিক, অসম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব এবং মানবতা ও জ্ঞানের ফেরিওয়ালা। ছাত্র জীবনে একজন সুদক্ষ খেলোয়াড় ছিলেন, বর্তমানে অসহায় অবহেলিত লাঞ্ছিত নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, বিশেষ করে অসহায় দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বিভিন্ন সময় আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে থাকেন|