
ক্রাইম রিপোর্টার : মোঃরাজিব খাঁন
বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান বাহারুল আলম সম্প্রতি রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে বলেন— “একসময় পুলিশ ফ্যাসিস্ট সরকারের লাঠিয়ালে পরিণত হয়েছিল। আমরা এখন সেই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি, যাতে পুলিশ আর কখনও জনবিরোধী শক্তিতে রূপ না নেয়।”
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানও দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থান ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তার নেতৃত্বে মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাবমূর্তি উন্নত হলেও, এখনো কিছু অসাধু সদস্য রয়েছেন যারা পুরোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ধারা থেকে বের হতে পারেননি।
এমনই এক বিতর্কিত সদস্য হলেন রাজশাহী রাজপাড়া থানার লক্ষিপুর পুলিশ বক্স ইনচার্জ এসআই করিম, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, ঘুষ ও ভয়ভীতির অভিযোগে আলোচিত।
মিস্ত্রির কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ
২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবর দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টা ১৫ মিনিটে রাজশাহী মহানগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় ঘটে এই ঘটনাটি।
সেদিন একটি গ্যারেজে কাজ শেষে ট্রায়াল দিতে বের হন ওয়্যারিং মিস্ত্রি রফিকুল ইসলাম টিটু। গাড়িটি চালানোর সময় হঠাৎ লাইট বিকল হয়ে যায় এবং অন্ধকারে রোড ডিভাইডারে ধাক্কা খায়।
ঠিক তখনই টিটুকে আটক করেন লক্ষিপুর পুলিশ বক্স ইনচার্জ এসআই করিম ও তার সহযোগী এএসআই শাহ আলম।
তারা টিটুকে মাদকাসক্ত চালক বলে অভিযুক্ত করে বক্সে নিয়ে যান এবং পরবর্তীতে মাদক মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, মামলার ভয় দেখিয়ে এসআই করিম টিটুর কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা উৎকোচ আদায় করেন। টাকা নেয়ার পর টিটুকে আরএমপি ধারায় চালান দেয়া হয়।
এ ঘটনাটি ইতিমধ্যে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকগুলোতেও প্রকাশিত হয়েছে।
দুর্নীতির আরও অভিযোগ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এসআই করিম শুধু এই ঘটনাই নন, বরং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দালালচক্র, বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও বাজার থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেন।
লক্ষিপুর কাঁচাবাজার, ফুটপাত ব্যবসা, এমনকি স্থানীয় দোকানদাররাও তার অনিয়মের শিকার।
এদিকে সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ওয়্যারিং মিস্ত্রি টিটুকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তার এক আত্মীয়।
অতীতেও বিতর্কিত ছিলেন করিম
এসআই করিম পূর্বে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে— যেমন ডিবি, দামকুড়া থানা, বোয়ালিয়া থানার শিরোইল ফাঁড়ি— দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে যেখানেই গেছেন, রাজনৈতিক পক্ষপাত ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগে ছিলেন আলোচিত।
স্থানীয়রা বলছেন, “তিনি ছিলেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট এক কর্মকর্তা, যিনি প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর ধরে টিকে আছেন।”
পুলিশ প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ হাবিবুর রহমান বলেন,
“দুর্ঘটনার বিষয়ে আমি অবহিত। তবে টাকা লেনদেনের ঘটনা সম্পর্কে এখনো কিছু জানি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এসআই করিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিক্রিয়া রাজশাহী শহর রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নেতারা বলেছেন
“রাজশাহী মহানগরীতে অতীতে কিছু পুলিশ সদস্যের কর্মকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলার চিত্র কলুষিত হয়েছে। তবে বর্তমান পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান পুলিশ প্রশাসনকে সুশাসনের পথে আনতে নিরলস পরিশ্রম করছেন। তাই যারা এখনও দুর্নীতিতে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
রাজশাহী মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন তুলনামূলকভাবে উন্নত হলেও, কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
ওয়্যারিং মিস্ত্রি টিটুর কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার ঘটনাটি সত্য হলে তা শুধু একজন কর্মকর্তার অনিয়ম নয়— এটি গোটা বাহিনির মর্যাদার ওপর আঘাত।
রাজশাহীবাসী এখন তাকিয়ে আছে— পুলিশ প্রশাসন সত্যিই কি এই অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্ত করবে, নাকি আবারও প্রভাবশালী কর্মকর্তার ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাবে ঘটনাটি?
জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল “খোলাকন্ঠ” এর জন্য দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিভার্সিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে জরুরী ভিত্তিতে সংবাদ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আগ্রহী প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত, ২কপি সদ্য তোলা পাসপোর্ট আকারের রঙ্গীন ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিসহ যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ কারা গেল। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রকাশক ও সম্পাদকঃ (খোলাকন্ঠ), ইমেইল: বার্তা ও বিজ্ঞাপন: kholakantha2025@gmail.com Web: http://kholakantha.com মোবাইলঃ +880 1714140672